ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু ভাইরাস বর্তমানে দেশের জন্য আতঙ্কের রোগ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছে। কারণ হচ্ছে, ডেঙ্গু সংক্রমণে অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে এবং এমনকি লক্ষণ থাকলেও অনেক চিকিৎসকই ডেঙ্গুর শনাক্তকরণে কোনো টেস্ট করানোর জন্য আগ্রহী নন।পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রথমবার এবং দ্বিতীয়বার সক্রমণে কোনো গবেষণাপত্র তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না।
পোস্ট সূচিপত্র
- ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
- সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ
- ডেঙ্গু জ্বরের সতর্কতামূলক লক্ষণসমূহ
- পরীক্ষা-নিরীক্ষা
- ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
- ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহ
- ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রতিষেধক
- ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস নামক মশার কামড়ে হয়। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ৫ ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো- ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩, ডেনভি-৪ এবং ডেনভি-৫ (২০১৩, ইন্ডিয়া)। ডেঙ্গু জ্বর ৩ প্রকারের: ১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ২ ) ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, ৩) ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং ৪) এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম। মানুষের শরীরে যদি প্রথমবার এই ৫ ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটি দিয়ে সংক্রমিত হয়, তাহলে লক্ষণসমূহ প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথমবার ডেঙ্গু সংক্রমণ হলে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের হয়।
এটি কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ওই নির্দিষ্ট প্রকারের ডেঙ্গু ভাইরাস বিপরীতে রোগ প্রতিরোধকারী এন্টিদেহ তৈরি হয় যা ভবিষ্যতে ওই নির্দিষ্ট প্রকারের ডেঙ্গু সংক্রমণকে প্রতিহত করে। আশঙ্কার কথা এই যে, দ্বিতীয়বার ওই ব্যক্তি যদি বাকি ৪ প্রকারের ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটিতে সংক্রমিত হয়, তাহলে তা মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে যা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম নামে চিকিৎসকগণের কাছে পরিচিত। এতে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে ওই ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহঃ
- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর (১০০-১০৪ ডিগ্রি ফাঃ)
- চোখের পেছনে ব্যথা
- মাথাব্যথা
- মাংসপেশিতে ব্যথা
- অস্থি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (হাড়ভাঙ্গা ব্যথা-বেকবোন ফিল্ডার)
- খাবারে অরুচি
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- র্যাশ দেখা দেওয়া (মুখমন্ডল, গলা এবং বুকের চামড়ায় লালচে বর্ণ বা দানা)
ডেঙ্গু জ্বরের সতর্কতামূলক লক্ষণসমূহঃ
- ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার
- ডেঙ্গুশক সিনড্রোম এবং এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গুসিনড্রোম
- চামড়ায় ছোট, মাঝারি অথবা বড় আকারের লালচে দানা
- দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
- নাক দিয়ে রক্তপড়া
- চোখের কোণে রক্তজমা
- পেটে প্রচণ্ড ব্যথা এবং কালো পায়খানা
- অনবরত বমি এবং রক্তবমি
- মেয়েদের মাসিকের সাথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
- অতিরিক্ত দুর্বলতা, খিটখিটে স্বভাব এবং অস্থিরতা
- রক্তের চাপ কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া
- তন্দ্রাচ্ছন, বিভ্রান্ত ও অজ্ঞান হওয়া
- পেটের ডান দিকে উপরিভাগে ব্যথা এবং চাকা অনুভব (লিভার বড় হলে)
- শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া (৯৬ ডিগ্রি ফাঃ এর চেয়ে কম)
- চোখ কোঠরে যাওয়া, মুখমন্ডল, জিহ্বা এবং ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া
- ৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হওয়া
পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
CBC, R/E M/E, ASO Titre, Widal Test, RA / Rf test, Triple Antigen, CRP, TPHA,
ICT for Malaria, ICT for Dengue Virous প্রয়োজনে আরো পরীক্ষা করা যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসাঃ
সাধারণ বা ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই ৭দিনের মধ্যে সাধারণত ভালো হয়ে যায়। তবে ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ডেঙ্গুশক সিনড্রোম এবং এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গুসিনড্রোম দেখা যাচ্ছে এবং এর কারণে অনেক প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। দু'একদিনের জ্বরে শরীরের রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যাচ্ছেন। জ্বরে শরীরের তাপমাত্রাও থাকছে কম ১০০-১০২ ডিগ্রি ফাঃ। এসব জটিলতা এড়াতেই অপেক্ষা না করে জ্বরের প্রথম দিনে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। এ ছাড়াও চিকিৎসকগণ কিছু রোগীকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যাদের ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই প্রথম দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক উপায়ে মাসিক হওয়ার উপায়
ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহঃ
- এক বছরের কম বয়সী বাচ্চা
- গর্ভবর্তী মা
- বৃদ্ধ ব্যক্তি
- ডায়াবেটিক
- হার্টের সমস্যা
- উচ্চরক্তচাপ
- কিডনির সমস্যা
- লিভারের সমস্যা
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url